Sunday, 13 March 2016

আমি জানিনা, জানিনা, জানিনা!

         ওই যাদুভরা কালো চোখে কী মায়া দোলে - আমি জানিনা, জানিনা, জানিনা! না - যাদুভরা কালো চোখের মায়া নয়, যাদুকন্ঠের মায়াই তাঁর জন্য নিয়ে এসেছিল শ্রেষ্ঠ নেপথ্য কন্ঠশিল্পীর পুরস্কার।

         ১৯৫২ সাল। পিতৃবন্ধু রবীন চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তরুণী আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় গাইলেন 'শুভদা' ছবিতে - 'আমি জানিনা, জানিনা, জানিনা', আর 'শেষের প্রহরে তুমি এলে'। ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই প্রকাশিত হল গানের রেকর্ড।




রেকর্ড নং - N 76002

ছায়াছবি - শুভদা (১৯৫২)

গান - আমি জানিনা জানিনা জানিনা

গীতিকার - গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার

সুরকার - রবীন চট্টোপাধ্যায় 

শিল্পী - কুমারী আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়  



আমি জানিনা, জানিনা, জানিনা,

ওই যাদুভরা কালো চোখে কী মায়া দোলে,

তার স্বপ্নের ইশারায় পরাণ ভোলে।

খুশী হব আরো কিছু কাছে এলে গো,

আর খুশী হতে পারি মন পেলে গো -

শুধু দূর হতে দেখা দিয়ে যাও যে চলে,

কেন জানিনা, জানিনা, জানিনা!

কেন যে এই দোলা লাগে জানিনা তো হায়,

চোখে চোখে চেয়ে শুধু মেতে না তৃষা,

মন আরও কিছু চায়। 

যত কথা সুর হয়ে বাজে মরমে,

সহজে বলিতে কেন বাধে শরমে!

সবই যেন বলে যাও কিছু না ব'লে,

কেন জানিনা, জানিনা, জানিনা! 


রেকর্ড নং - N 76002

ছায়াছবি - শুভদা (১৯৫২)

গান - শেষের প্রহরে তুমি এলে 

গীতিকার - গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার

সুরকার - রবীন চট্টোপাধ্যায় 

শিল্পী - কুমারী আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় 



শেষের প্রহরে তুমি এলে,

ওগো কোথায় ঠিকানা বল পেলে।

ভাঙ্গা এ বাসর ঘিরে,

প্রদীপ নিভলো ধীরে -

কেমনে দেব গো তারে জ্বেলে।

পান্ডুর চাঁদ ওই কহিল হেসে, 

মায়ায় ভোলাতে বুঝি এলে গো শেষে।

মালা যে রয়েছে ঝ'রে

বাঁধিব কেমন করে বল,

যাবে কী আমারে একা ফেলে?


         'বঙ্গীয় চলচ্চিত্র ও নাট্য সংঘ'-এর বিচারে, 'শুভদা'-র গানের জন্য সে বছরের শ্রেষ্ঠ নেপথ্য কন্ঠশিল্পীর সম্মান পেলেন আলপনা। শ্যামবাজারের 'শ্রী' সিনেমায় শিল্পীর হাতে মানপত্র তুলে দিলেন তৎকালীন  রাজ্যপাল ড. হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

         শিল্পীজীবনের সেই প্রথম স্বীকৃতির কথা চিরদিন স্মরণে রেখেছিলেন আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় (পরে মুখোপাধ্যায়) - তাই হয়ত জীবন সায়াহ্নের একটি সাক্ষাৎকারেও অবলীলায় গেয়ে উঠেছিলেন - ওই যাদুভরা কালো চোখে কী মায়া দোলে - আমি জানিনা, জানিনা, জানিনা! গান-শেষের 'জানিনা'-য়, আলপনার সেই চিরায়ত 'টান' - উচ্ছাসে প্রবীণা  শিল্পী যেন ফিরে যান ১৯৫২-র সেই সন্ধ্যায়!